আজ বৃহস্পতিবার, ২১শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৬ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

আজ বন্দর উপজেলা নির্বাচন, শেষ মুহুর্তে ইভিএম জুজুর পরিকল্পনা ভেস্তে দিতে পারে!

সংবাদচর্চা রিপোর্ট:

আজ পঞ্চম ধাপে বন্দর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বন্দরের ৫৪টি ভোট কেন্দ্রে চলবে ইভিএম এ ভোটগ্রহণ।

ভোটগ্রহণকে কেন্দ্র করে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে সোমবার (১৭ জুন) সকালে পুলিশ, আনসার সদস্যদের নিরাপত্তা বিষয়ক ব্রিফিং করেছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. মনিরুল ইসলাম। এদিকে নির্বাচন উপলক্ষে মঙ্গলবার বন্দরে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এখানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনীত একমাত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী থাকায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয় বন্দর আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ রশিদ। বন্দর উপজেলা নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীদের সরব উপস্থিতি ঘিরেই ছিলো ভোটের উত্তাপ। তফসিল ঘোষনার পরপরই নির্বাচনে অংশগ্রহনে ইচ্ছুক প্রার্থীদের মাঠ চড়ে বেড়াতে দেখা গেলেও, প্রতীক বরাদ্দের পর কোন এক অদৃশ্য কারনে তাদের মাঠ থেকে সরে যেতে হয়। ভাইস চেয়ারম্যান পদে শুধু মাত্র একজন প্রার্থী ছাড়া সকল প্রার্থীদের কল্পিত চরিত্র জুজুর ভয় দেখিয়েই মাঠ থেকে সরে যাবার নির্দেশ দেন সেই অদৃশ্য শক্তি।

তবে কেন হঠাৎ এতো দুর পর্যন্ত এসে আবারও নির্বাচনী মাঠ থেকে সরে গেলেন এমন প্রশ্নেই কোন ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীই মুখ খুলতে রাজি হয়নি। জানা যায়, জাতীয় পার্টি নেতা সানাউল্লাহ সানু নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমানের ঘনিষ্ট কর্মী। যার বদৌলতেই তিনি ছাড়া সব প্রার্থীরা নির্বাচনী কার্যক্রম থেকে দূরে। তবে প্রতীক বরাদ্দ হওয়ার পরে নির্বাচনী মাঠ থেকে দূরে থাকলেও নির্বাচন কমিশনের নিকট কোন অফিসিয়ালি দরখাস্ত না দেওয়াতে তাদের বরাদ্দকৃত প্রতীক থাকছে বন্দর উপজেলা নির্বাচনের ব্যালট পেপারে। আর যার যতটুকু জনপ্রিয়তা সেই অনুসারেই ভোটারদের ভোট পরবে ব্যালট পেপারে। আর সেই অনুসারেই অদৃশ্য শক্তির পরিকল্পনা ভেস্তে যেতে পারে বলে মনে করেছেন অভিজ্ঞ মহল। এখানে কোন ভোট ব্যালট ছিনতাইয়ের ব্যবস্থা নেই। ইভিএমে যার যার ভোট পড়বে। কেউ জোর করে ভোট কেটে নিতে পারবে না। তবে আশঙ্কা আছে হ্যাক করার।

সূত্র বলছে, ১ লাখ ১৪ হাজার ৫শ ৯৩জন ভোটার রয়েছে এই উপজেলা। যার মধ্যে পুরুষ ৫৮হাজার ৩শ ২৫জন এবং মহিলা ৫৬হাজার ২শ ৬৪জন। পুরো নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা রয়েছে বন্দর নির্বাচনী এলাকা। যেখানে কোন প্রকার অনিয়ম হবে না বলেই নির্বাচন কমিশনের দাবী।

আর ভোটারদের উপস্থিতিতে সুষ্ঠুভাবে ভোট দিতে পারলে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীদের ভোট দিলে নির্বাচনী মাঠে একক প্রার্থী সানুর ভোট সংখ্যা কমে যাবে। যার কারনেই অদৃশ্য শক্তির পরিকল্পনা ভেস্তে যেতে পারে বলে ধারনা সাধারণ মানুষদের।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রার্থীরা বলছেন, আমাদের উপরে অদৃশ্য চাপ রয়েছে। কে বা কারা চাপ প্রয়োগ করেছে তা বলবো নয়। তবে আমরা মাঠে না হলেও ফিল্ড পর্যায়ে পরিচিত মুখ। যার কারনে আমাদের জয়ের একটা মাধ্যম থেকে যায়।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, ভাইস চেয়ারম্যান পদে আলহাজ্ব মো. নুরুজ্জামান (তালা), হাফেজ পারভেজ (চশমা), মো. সানাউল্লাহ সানু (উড়োজাহাজ), শহিদুল ইসলাম জুয়েল (টিউবওয়েল), আক্তার হোসেন (বই) এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে সালিমা হোসেন শান্তা (ফুটবল), নুরুন্নাহার বেগম (হাস) ও মাহমুদা আক্তার (কলস) প্রতিকে নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। যেহুতু এখনো কোন প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে যান নাই সুতরাং সকলের প্রতীক ব্যালট পেপারে থাকবে।

এ বিষয়ে মাঠে সরব একমাত্র প্রার্থী সানাউল্লাহ সানু বলেন, আমার কোন ভয় নেই। আমি একমাত্র প্রার্থী, আমাকে সকল প্রার্থীরা সর্মথন জানিয়ে আমার জন্য মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে। প্রতিটি ঘরে ঘরে আমার নির্বাচনি প্রচারণার বার্তা পৌছে গেছে।

আক্তার হোসেন (বই প্রতীক) বলেন, আমার ভাই অসুস্থ, তাকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জের বাহিরে আছি। আমি এ বিষয়ে কিছু বলতে চাই না।

হাফেজ পারভেজ (চশমা প্রতীক) বলেন, আমি সানু ভাইকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচনি মাঠ থেকে সরে দাড়িয়েছি।

তবে এ বিষয়ে শহিদুল ইসলাম জুয়েল (টিউবওয়ল প্রতীক) ও আলহাজ্ব নুরুজ্জামান (তালা প্রতীক) এর সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি।

তবে নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীরা। জনপ্রিয়তা এবং ভোটার বিবেচনায় কার ভাগ্যে যাবে ফল তা কয়েক ঘন্টার মধ্যে জানা যাবে।

এদিকে জেলা পুলিশ জানায়, উপজেলা নির্বাচনে প্রতিটি ইউনিয়নে ২টি করে এবং কলাগাছিয়া ইউনিয়নে ৩টি মোট ১১টি মোবাইল পুলিশ টিম থাকবে। এছাড়া প্রতিটি কেন্দ্রে পুলিশ, আনসার ও গ্রাম পুলিশ পর্যাপ্ত হারে থাকবে। স্ট্র্যাইকিং পার্টি থাকবে ২টি। তিনজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও একজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া নির্বাচন উপলক্ষ্যে সদরে একটি স্ট্যান্ডবাই রাইটফরমেশন মুভমেন্টে থাকবে। নির্বাচনে পুলিশ, আনসার ও গ্রাম পুলিশসহ ১ হাজার ৮৯ জন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন থাকবে। এছাড়া জেলা পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ সার্বক্ষনিক তদারকি করছেন।